জিহাদীদের সিরিজ খুনের চাপাতির কোপ "নাস্তিক ব্লগার" এর পরিধি ছাড়িয়ে শিগগিরই বিদেশি, ভিন্ন ধর্মালম্বী, অধ্যাপক, হোমিও চিকিৎসক, সমকামী, এমনকি মসজিদের ইমাম, শিয়া ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে শেষমেষ সরকার কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে অভিযানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইন-শৃংখলা বাহিনী। অভিযানে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী-জঙ্গি। অবশ্য আমরা মুক্তমনারা আগেই সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলাম, ব্লগার খুন হচ্ছে জিহাদের সূচনা মাত্র; খেলাফত, তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার খোয়াবে মশগুল মুজাহিদরা শিগগিরই হত্যার পরিধি বিস্তৃত করবে। রাষ্ট্র দখল করাই যেহেতু তাদের লক্ষ্য, তাই তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর আঘাত হানবে শিগগিরই। আর সরকারি উদাসিনতায়, বলা ভালো, জিহাদীদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের হত্যাযজ্ঞ দেশজুড়ে ছড়াতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ... ...
পুরো রাজনীতি আজকে দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে পড়েছে। দেশে বলুন বা আন্তর্জাতিক স্তরে, দক্ষিণপন্থী প্রবণতা হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সাহেব থেকে বৃটেনের ব্রেক্সিটওয়ালারা থেকে আমাদের খাঁটি স্বদেশি মোদি সরকার – হক্কলে ভূমিপুত্র রাজনীতির ডালে দক্ষিণমুখী বাসা বেঁধেছেন। আসাম ব্যতিক্রম নয়। আসাম আন্দোলনের সময়ে কিন্তু ছবিটা এরকম ছিল না। বামপন্থীরা হিংস্র জাতীয়তাবাদীর স্রোতের প্রতিকূলে গিয়েছিলেন, নিজের রাজনীতি রাখার ধক দেখিয়েছিলেন। বিনিময়ে পার্টি (সি পি আই, সি পি এম – দুই পার্টিই) বহু কমরেডের শাহাদত স্বীকার করেছিল। আজ বছর চল্লিশ পরে দলগুলোর সেই তাত্বিক বা ব্যবহারিক ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না যে একটা ঠিকঠাক রাজনৈতিক লাইন নিতে পারে। ... ...
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রায়ই একটা কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা দেশ কেমন তা জানতে হলে, সেই দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তা জানতে হবে। আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে? এখানেই লজ্জায় মুখ লুকাতে হয় সংখ্যাগুরুর। আমারা ভাল রাখতে পারিনি আমার প্রতিবেশীকে। নানা প্রতিবেদন, গবেষণা প্রমাণ করছে যে আমরা কত যত্ন করে দেশের বিশাল একটা অংশের মানুষকে স্রেফ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। গবেষণা বলছে, প্রায় একটা দেশের মত জমি আমরা দখল করেছি শুধু মাত্র দেশছাড়া করেই! কত চমৎকার না ব্যাপারটা? এই যে পরিস্থিতি – তা হুট করেই তৈরি হয়েছে? আকাশ থেকে নাজিল হয়েছে গজব? সংখ্যাগুরুর পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নানা অনুভূতি। পোশাকে অনুভূতি, জুতাতে অনুভূতি, চোখের দৃষ্টিতে অনুভূতি। পান থেকে চুন খসলে এই সব অনুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে সংখ্যালঘুর কোন অনুভূতি নাই। পেটে নাই, রক্তে নাই, ঘরবাড়ি কোথাও কোন অনুভূতি নাই। ... ...
দুর্গাপূজার আগে আগে মিস্ত্রী আনা হতো ধান রাখার কড়োই তৈরি করার জন্য। তাদের পাণ্ডা ছিল শীতল কাকা। তারা এসে অনেকদিন থাকতো, খেতো, আর কড়োই বুনতো। এই কাজটা সবাই পারে না। একটা কড়োই বুনতে অনেকদিন সময় লাগতো। মড়াই বোনা বরং অনেক সহজ। মড়াইটা খড় পাকিয়ে বিচালি তৈরি করে বুনতে হতো, আর কড়োই বাঁশের বাতা দিয়ে। মড়াই নিয়মমতো ছোট-বড় করা যেতো। কড়োই একবার তৈরি হয়ে গেলে আর কিচ্ছুটি করা যেত না । -- " বুঝলা দাদুভাই, ষাট মণ, আশি মণ, নানা মাপের কড়োই হইতো। যতো বড় পরিবার, যতো সম্পন্ন গিরস্থি -- তত বড় কড়োই। " প্রথমে মাটিতে বাতা পুঁতে পুঁতে গোল করে পানের ডাবরের মতো একটা ফ্রেম বানানো হতো। তারপর তারমধ্যে আরো সরু সরু বাতা দিয়ে দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কড়োই বোনা হতো। ঝুরি, চুপড়ি, ধামা বানানোর মতোই একটা পদ্ধতি। কড়োইয়ের ফ্রেম এতো বড় তাই দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেতো না। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি হলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পাঁচিল টপকে অনেক কষ্ট করে ভিতরে নিয়ে যেতে হতো। অনেক লোকও লাগতো তার জন্যে। এইসব কঠিন কঠিন কাজ করার সময় তারা মুখে নানা আওয়াজ করতো। গান করতো। শীতলকাকা যখন কাঠের কাজ করতে আসতো, ঠাকুমারা চুপ করে তার কাজ দেখতেন। জল থেকে কাঠ বা তালগাছের কাঁড়ি তুলে এনে সেগুলো ‘বাইশ’ দিয়ে কি সুন্দর মসৃণ করে ছুলে ছুলে দরজা জানলার ফ্রেম বানিয়ে ফেলতো। যন্ত্রগুলোর নামও শেখাতো শীতলকাকা। বাটালি, বাইশ, করাত, ছেনি, হাতুরি আরো অনেককিছু থাকতো তার ব্যাগে। -- "একটাই প্রশ্ন শীতলকাকা প্রত্যেকবার আমাগো জিগাইতো। “আচ্ছা কওতো, একটা ব্যাগে একশোটা যন্ত্র আছে, তা থেকে ‘বাইশ’টা তুইলা নিলে কটা থাকব ?” বাইশ বিয়োগ কইরাই উত্তর দিতাম। কাকা ঘাড় নাড়াইয়া কইতো, “উহুঁ হয় নাই , হয় নাই। ভালো করে ভাবো।” আমরাও চিৎকার কইরা কইতাম, “নিশ্চয়ই হইসে, তুমি ভুল কইতাসো।” সে বলতো, “না রে বোকা নিরানব্বইটা হইব। একটা যন্ত্রের নামই তো ‘বাইশ’।” প্রত্যেকবার এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতেই হতো। অন্যেরা ঠিক বললেও, লানছু ঠাকুমা প্রতিবার গল্পটা শোনার জন্য, ভুল উত্তর দিতেন। কাকা ছিলেন তার নামের মতোই শান্ত শীতল। ... ...
এবার আর মঙ্গল শোভাযাত্রা নেই। হালখাতা নেই। কলকাতার রাজপথ শুনশান, ঢাকার রাজপথে আল্পনা হবে কিনা জানা নেই। তবু বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দেওয়া পয়লা বৈশাখ আছে, দুর্যোগের মধ্যেও। আজ থেকে শতাধিক বছর আগে, এক দুর্যোগের দিনে, গানটি লিখেছেলন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে ছিল বঙ্গভঙ্গ রোখার সময়। রাখিবন্ধনের সময়। কলকাতার রাজপথে নেমেছিলেন, কবি স্বয়ং, সেই দুর্যোগের দিনে। এবারও দুর্যোগ আছে। কিন্তু রাজপথে নামা নেই। দুর্বৃত্তরা আছে, আবারও বঙ্গভঙ্গের খাঁড়াও আছে মাথার উপর। গানটিও আছে। হলই বা একটু পুরোনো। যার প্রাসঙ্গিকতা আছে, তাকে নতুন করে গাওয়া যেতেই পারে। অন্য মোড়কে রইল সেই গানই। এবার পয়লা বৈশাখে। ঠিক সকাল সাড়ে আটটায়, দেখার জন্য ক্লিক করুন। ... ...
‘মিয়া’ শব্দের অর্থ হতে পারে, জ্ঞানী, ভদ্রলোক, মহাশয়, এইরকম। কিন্তু মিঞা পয়েট্রি যাঁদের কথা বলে, তাঁদের ‘মিয়া’ বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। অপাক্তেয় যেন। তাঁদের অস্তিত্বই যেন অবাঞ্ছিত । সেই তাচ্ছিল্যকেই হাতিয়ার করে, তাচ্ছিল্যের অপসংস্কৃতিকে বৌদ্ধিক স্তরে চিহ্নিত করে দেয়ার থেকেই নিজেদের ‘মিয়া’ বলে ঘোষণা করে দেয়ার কবিতাই মিঞা পয়েট্রি। নিজেদের কথাটি সংগবদ্ধ করে মিঞা’র আসল অর্থও জানিয়ে দেয়া। ... ...
আসামের সর্বাঙ্গীন উন্নতিতে হিন্দু-মুসলমান বাঙালীর একটা বিরাট অবদান রয়েছে। কিন্তু অসমীয়া রাজনীতিবিদেরা চিরকাল সাধারণ অসমীয়াকে বুঝিয়ে এসেছে বহিরাগতরাই আসামের দুর্গতির মূল কারণ। তাদের বিতাড়ন করতে পারলেই এই জমি, এই জলজঙ্গল, এই প্রাকৃতিক অকৃপন সম্পদ, ভাষা-ধর্ম সব কিছুতে আমাদের প্রভুত্ব চলবে। যে করে হোক আমাদের সংখ্যাগরিষ্ট প্রমান করতে পারলেই কেল্লা ফতে। আর তার জন্য প্রয়োজন এদেরকে যত বেসী সংখ্যায় বিতাড়ন। কিন্তু দেশভাগের পর উদ্বাস্তু স্রোত, একাত্তরে খানসেনার দাপটে আতংকিত হিন্দু মুসলিম শরণার্থী আর পরবর্তী সময়ে খেপে খেপে নিজস্ব ও সামাজিক- অর্থনৈতিক কারণে কখনও মুসলিম, কখনও হিন্দু অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে আসামে। ... ...
এক নারীকে পুরোপুরি উলঙ্গ করে তার ওপর নির্যাতন করছে প্রভাবশালী মাস্তানরা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এর পাশে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার,বাদল ও কালামের নৃশংস নির্যাতনের শিকার এই নারী,বহু বার পায়ে ধরে বাবা ডাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি এই নারীর।তারা খুব নারকীয়ভাবে এই নারীর যৌনাঙ্গ ও সমস্ত শরীরে নির্যাতন করে। যেখানে এই নারীর যৌনাঙ্গে টর্চ লাইট ও হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খুব খারাপভাবে নির্যাতন করা হয়েছে,যা ৭১এর বর্বরতাকেও হার মানায়। সম্পূর্ণ ভিডিওটি প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন পোস্টদাতা। এই একটি ঘটনার বহুমাত্রিকতা আসুন একটু তলিয়ে দেখি, এই সদম্ভ উল্লাসকারী ধর্ষকগুলির বয়স কত? আঠারো থেকে ত্রিশ। পরপর দুটি প্রজন্ম। তারা কেন করেছে এই ঘৃণ্য অপরাধ? আমাদের বিশ্বাসযোগ্য বিশ্বাসকে ভেঙেচুরে, ভাবতে পারেন এই জেনারেশন কাজটি করেছে তাদের ‘পবিত্র দায়িত্ব’ ভেবে! ভাবতে পারেন, নারীটির প্রাক্তন স্বামী তার ঘরে এসেছিল বলে তাকে শায়েস্তা করার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ তারা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে কাঁধে। ভাবুন, পড়শির বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রজন্মের বৌদ্ধিক পতন। ... ...
এমনই এক নির্মম বাস্তবতায় সবশেষ, ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের বলপাইয়া আদাম এলাকায় পাহাড়ি গ্রামের ভেতরে ঢুকে নয়জন সেটেলার বাঙালি হামলা ও লুঠপাঠ চালায়। এ সময় তারা বাড়ির প্রতিবন্ধী চাকমা মেয়েটিকে গণধর্ষণ করে। লক্ষ্যণীয়, সেপ্টেম্বরেই খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও মহালছড়িতে দুজন পাহাড়ি স্কুলছাত্রী এবং বান্দরবানে এক ত্রিপুরা নারী ধর্ষিত হয়েছেন, আদিবাসী বলে এ পর্যন্ত কোনো ঘটনারই সুরাহা হয়নি। ওই ঘটনার পর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের একজন প্রতিনিধি নির্যাতিতা প্রতিবন্ধী মেয়েটির বাড়িতে যান। তিনি দেখেন, মেয়েটির মা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর আহাজারি করে বলছেন, “আমরা কি এদেশের নাগরিক নই? তাহলে কেন আমাদের ওপর এমন অত্যাচার?” সাংবাদিক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কয়েক বছর আগে বাবা ও ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পাহাড়ের আরো আট-দশটা নির্যাতনের ডামাডোলে প্রতিবন্ধী নারী গণধর্ষনের ঘটনাটিও হয়তো হারিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু এক্ষেত্রে সোচ্চার হয় দেশ। করোনাক্রান্তির ভেতরেই পাহাড়ে তো বটেই, খোদ ঢাকার শাহবাগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন একের পর এক প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। ... ...
পাহাড় ও সমতলের ভাষাগত সংখ্যালঘু, তথা আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে আদিবাসীর মাতৃভাষায় পাঠের ওই বেহাল চিত্র প্রায় একই। পার্বত্য চট্টগ্রাম, বৃহত্তর উত্তরবঙ্গে, কক্সবাজার ও পটুয়াখালিতে ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে অল্প কয়েকটি চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, রাখাইন ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্রাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে এসেছে এ ক্ষেত্রে। অনেক দেরিতে হলেও ২০১৪ সালে প্রথম খোদ সরকারই এগিয়ে আসে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে। তবে আর সব সরকারি প্রকল্পের মত চার বছরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ উদ্যোগ। বাংলাদেশের প্রায় ৭০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠির ২৫ লাখের বেশী মানুষ হাজার বছর ধরে বংশপরম্পরায় ব্যবহার করছেন নিজস্ব মাতৃভাষা। পাশাপাশি বাঙালির সঙ্গে ভাব বিনিময়ে তারা ব্যবহার করেন বাংলা। প্রতিটি আদিবাসী জনগোষ্ঠির রয়েছে নিজস্ব প্রাচীন ভাষা, রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। ... ...
আজকের বিশ্বে ইসলাম ধর্ম নিয়ে যত লেখালেখি হয়, যতখানি ভাবতে হচ্ছে, সেমিনার, সম্মেলন, গবেষণা করে জানতে চাওয়া হচ্ছে ইসলামকে কিভাবে উগ্রতা থেকে উদার ও সহনশীল করে তরুণ-যুবাদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়- তার এক পার্সেন্টও অন্য কোন ধর্মকে নিয়ে করার প্রয়োজন পড়েনি। ইসলাম ধর্মের উদারপন্থি যেমন আছে তেমনি কট্টরপন্থিও আছে। অন্য ধর্মেও এরকম বিভক্তি দেখা যায়। তবে তারা একে অপরকে “অখ্রিস্টান” বা “অহিন্দু” টাইপ কিছু ঘোষণা করেন না। একে অপরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রক্তাক্ত করেন না। ইসলামে এটা নিত্য সহা এক সত্য। রোজ এক দল নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলাম অনুসারী ও বিপক্ষকে ইসলাম থেকে খারিজ বলে দাবী করেন। ইসলামের হাজারো পন্থির সকলের একই কুরআন, একজনই নবী মুহাম্মদ, প্রত্যেক পন্থিদেরই আল্লামা, শাইখুল হাদিস আছেন। তারা আপনাকে কুরআন থেকে দেখিয়ে দিবেন একমাত্র তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম অনুসারী। নবী মুহাম্মদকে তারাই অক্ষরে অক্ষেরে পালন করেন। আপনার আমার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে আপনি আমি একজন মুসলমান হিসেবে কাদের খপ্পরে পড়বো সেটা নির্ভর করে সেই অঞ্চলে কারা ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন তাদের উপর। ... ...
তো, নেলী আমাদের সাথেই আছে, অনেক দিন ধরে আছে। নেলী, মানে নেলী নামের অঞ্চলটি, আসামের আর পাঁচটা ছোট মফস্বলের মতই। ঘন সবুজ ধানখেত, দিগন্তে মেঘালয়ের কালো পাহাড় দেখা যাচ্ছে, দুএকটা জায়গায় সেগুনগাছ-ঝোপঝাড়, ব্যস্ত বাজার, দূর্গাপূজার মন্ডপ, আর জামাকাপড় থেকে বড়সড় মুসলমানদের জনসংখ্যা অনুমান করা গেল। ১৯৮৩-র দিনটিতে কী হয়েছিল তার কোনো স্মারকচিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে এরকমই তো হওয়ার কথা ছিল। দিল্লী ১৯৮৪ বা গুজরাট ২০০২-হত্যাকান্ডকে রাষ্ট্র ন্যূনতম বিচারের মাধ্যমে জবাব দিয়েছে, তার কারণ তাদের প্রেতাত্মারা ফিরে ফিরে আসে। আর নেলী দেশের দূরের কথা, রাজ্যের রাজনীতিতেও এক বিস্মৃত অধ্যায়। গরিব, পাড়াগেঁয়ে মুসলমানরা মরেছে এরকম এক গণহত্যা কে মনে রাখে। দ্বিতীয়ত, যারা মরেছে মরেছিল অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়। ফলে তাদের সুবিচারের দাবি আরেকটু নড়বড়ে হয়ে যায় বইকি। দিল্লী বা গুজরাটের মৃতদের ঠিকঠাক ধর্ম ছিল না, কিন্তু তারা যে ভারতীয় নাগরিক, অনুপ্রবেশকারী নয় এই নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। তৃতীয়ত, হত্যাকান্ড ঘটেছে এক প্রান্তিক প্রদেশে, ভারতীয় মূলভূমি থেকে অনেক দূরে। তাই আমাদের জাতীয় যৌথ বিস্মৃতি ঘণ হয়ে ওঠে। সংক্ষেপে, নেলীর কথা কেউ শোনে না। একটি হত্যাকান্ডের পরোক্ষ বৈধতার জন্য যখন আগের একটিকে খাড়া করা হয়, নেলীর নাম তখনো আসে না। কেননা নেলীর মধ্যে পরবর্তী কোনো হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেওয়ার মূল্যটুকু নেই। দেশের যৌথ স্মৃতির কাছে নেলী ঘটেইনি। ... ...
বষয়টিকে একটু বিশদ করার প্রয়োজন মনে করি। যে কোনও বাঙালিরই মানসভুবন কলকাতা আর দেশভাগে বাস্তুচ্যুত বাঙালির শিকড়ভুবন পূর্ববঙ্গ। বাস্তুচ্যুত যে কোনও বাঙালি কবিরই নান্দনিক জগৎ কলকাতায়, সেখান থেকে ইশারা আসে, খবর আসে। সেখানকার আলো হাওয়ায় কেলাসিত হয়ে বহির্বিশ্বও তার কাছে এসে ধরা দেয়। আবার তার প্রাণের শিকড় তো, অন্তত গত শতাব্দী পর্যন্ত, চারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কোনও চোখে না দেখা-নাম শোনা কিংবা চোখের দেখা-প্রাণের-কথায়-ভরা গ্রামে। সেখান থেকে কি আসত? আসত স্মৃতি আর রূপকথা। কিন্তু তার বাস্তবের পৃথিবী? দেশভাগের পর বাস্তুচ্যুত বাঙালির বাসভুমি তো ছড়িয়ে আছে আবিশ্ব - নিউ ইয়র্কের পানশালা থেকে আসাম কিংবা মিজোরামের অনাবাদী জমির পাশের ঘাসবৃক্ষ পর্যন্ত। এখন, এই বাস্তবের পৃথিবীর শিশিরবিন্দুগুলিকে ভালো না বেসে, তার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কবি যদি শুধু ঘুরে বেড়ান এক অতৃপ্ত মানসলোকে কিংবা স্মৃতিপৃথিবীতে - তাঁর এই পর্যটন তো, পুরাণের ভাষায় বললে, গণেশের সেই মাতৃপ্রদক্ষিণ, যা আসলে কার্তিকের প্রকৃত ভ্রমণটিকে দাবিয়ে রাখার জন্য বানানো এক নিপুণ কথার ফাঁদ। তো একজন কবির তো আসল সত্যটা জানা চাই। কথার ফাঁদ কতদিন আটকে রাখবে তাঁর কবিত্বকে? আর এই কথার ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছে আসামের বাংলা কবিতা তার আশ্চর্য ভূগোল-সচেতনতায়। মূলত দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারনে বিগত শতাব্দীটি ছিল কাঁটাতারের আর উদ্বাস্তু প্রব্রজনের। তার ভূগোল-চেতনার মাধ্যমে আসামের বাংলা কবিতা সব মানস-কাঁটাতারকে অগ্রাহ্য করার শক্তি পেয়েছে। ... ...
পলান সরকার একার উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন এক চলমান গ্রন্থাগার। ঝোলা ভর্তি বই নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে তিনি বই পৌঁছে দিতেন বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে, পাঠকের দরজায়। নিজের বই পড়ার অভ্যাস তিনি চারিয়ে দিয়েছিলেন প্রত্যন্তে ও প্রান্তে। থেমে গেল পলান সরকারের চলা, কিন্তু তাঁর তৈরী পাঠকদের মননে তাঁর কীর্তি থেকে যাবে, থেকে যাবে তাঁর স্বপ্ন। তিনি যে আলোকবর্তিকাটি জ্বালিয়ে দিয়েছেন আজীবনের সঞ্চয়ে ও শ্রমে, তা আলো দেবে ভবিষ্যতকে। পলান সরকারকে নিয়ে দু'টি লেখা, লিখেছেন হাসনাত কালাম সুহান ও দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম। ... ...
সে যাক, এ তো আমার দাদুর গল্প নয়, দেশভাগের কাহিনী, যার গায়ে লেগে আছে, আগুন, হত্যা, অসম্মান আর সব হারাবার টক টক গন্ধ। কিন্তু একথা তো ঠিক, দেশভাগ সম্বন্ধে আমার জ্ঞান পুঁথিগত হয়েও হতে পারেনি ঐ ড্রয়ার দুটির জন্য। আসলে আজকাল স্মৃতি নির্ভর অভিজ্ঞতা, গল্পকাহিনী, এগুলোও ইতিহাসের অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তাই মনে পড়ল ঐ অবিনাশী ড্রয়ার দুটির কথা, যে দুটোতে এখনও রয়ে গেছে মা, ঠাম্মা, দিদা এমনকি প্রতিবেশীদেরও নিজস্ব অভিজ্ঞতা অথবা নিছকই শোনা কথা। টুকরো টুকরো আলাপ এবং প্রলাপ, যাদের জোড়া দিলে উঠে আসে এই উপমহাদেশের একটি বালিকার অকিঞ্চিৎকর শৈশব এবং সেই শৈশবের গায়ে লেগে থাকা এক ভয়ংকর অবিমৃষ্যকারিতার তীব্র গন্ধ। দেশভাগের অনেক পরে জন্ম বলে যে বালিকার পাওনা ছিল একটি নিরুপদ্রব মেয়েবেলা, যে ছিল এইসব ঘটনা থেকে অনেক দূরে, দেশভাগের গল্পকথার অভিঘাত তাকেও ছাড়েনি। চারপাশে মন পালটে দেওয়া, মনুবাদী করে তোলার সমস্ত মাল মশলাই তৈরি ছিল, কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ঐ গল্প ভর্তি গোপন দুটি ড্রয়ার আর সাহিত্যপাঠ। ভাগ্যিস! ... ...
বাস্তবে, হিন্দু ধর্মের মন্দির, পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য জুমার নামাজের যে মিছিলগুলো বের হয়েছিল, মসজিদে-মাদ্রাসায় মাইকিং করে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত, জেহাদি জোশে যারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর!’ ধ্বনিতে বিধর্মী-কাফেরদের ওপর হামলা করেছিলেন, ভাঙচুর, লুঠপাঠ ও অগ্নিসংযোগ করে বদলা নিতে মরিয়া ছিলেন, তাদের কোনো দল ছিল না, ওই জেহাদি মিছিলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, কমিউনিস্ট পার্টি – সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল, মিছিলকারীদের একটিই পরিচয় তখন যেন প্রধান, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’ ... ...
নড়াইলে লোহাগড়া সাহাপাড়ায় গত শুক্রবার( ১৫ জুলাই, ২০২২) পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং মন্দিরে হামলা করেছে ধর্মান্ধরা। কারণ? কোন কারণ যদিও লাগে না, এবারও তেমন কোন কারণ নাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ এখন ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে যাচ্ছে। জুম্মার নামাজের পরে হুট করেই তাদের নজরে আসে যে ধর্মের তো প্রচণ্ড অপমান হয়ে গেছে, মান উদ্ধার না করলেই না! তারা মান উদ্ধারে নেমে গেছিল বিকালের মধ্যে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেউ অনুভূতিতে আঘাত করেছে আর সেই আঘাতে কাতর হয়ে এরা গিয়ে নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘরে হামলা করেছে! এবং, তাদের ধারণা এতে ধর্মের যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণ হয়ে গেছে! ... ...
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ছোট ছেলেমেয়েদের রাস্তাদখল আর কর্তৃত্বের অধিকার কে দিল? আসলে এই অধিকার দিল তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর মালিকানাবোধ। তারা এখন বড়দের শেখাচ্ছে এইদেশের মানুষ প্রজা নয়, তারা নাগরিক, নাগরিকের অধিকার লুন্ঠিত হলে তা প্রতিষ্ঠার অধিকার ও দায়িত্ব তাদের আছে। এই দেশের মালিক এই দেশের মানুষ, কিছু লোভী ব্যক্তি আর নিপীড়ক গোষ্ঠী নয়। বড়রা যদি এই মালিকানা দাবি করতে না পারেন, তাহলে ছোটরাই এগিয়ে এসে বড়দের পথ দেখাবে। আসলে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে গণজাগরণ ঘটেছিল, সেটি ছিল প্রজন্ম ’৭১র বিদ্রোহ। মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় প্রজন্ম সেদিন যুথবদ্ধ হয়ে পথ দেখিয়েছিল দেশকে। আর এখন যারা আন্দোলন করছে, এই ছোটরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম, যাদের হাতে আগামীতে দেশের স্টিয়ারিং থাকলে, কখনোই পথ হারাবে না বাংলাদেশ! ... ...
মিরোনা খাতুন নামে এক উজ্জ্বল মশালের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। পুরুষদের পেশাদার ফুটবল দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন মিরোনা খাতুন। বহির্বিশ্বে এমন নজির দেখা গেলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এই দৃষ্টান্ত এটাই প্রথম।বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন লিগে ঢাকা সিটি এএফসি ক্লাবের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেছেন মিরোনা। কোন প্রকার দয়া বা কারো করুণায় এই দায়িত্ব পাননি মিরোনা। এএফসি বি লাইসেন্স প্রাপ্ত কোচ তিনি।কোচিংয়ের যাবতীয় শর্ত মেনেই মিরোনাকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা সিটির দায়িত্ব। নিজে ছিলেন দীর্ঘদিন জাতীয় দলের খেলোয়াড়।জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে নৌ বাহিনীতে এথলেট হিসেবে খেলেছেন কিছুদিন। তারপরেই করেন এএফসি বি লাইসেন্সের কোর্স। ফলাফল পেশাদার গোটা একটা ফুটবল দলের প্রধান কোচ এখন তিনি। মিরোনার অবশ্য এখানেই থেমে যাওয়ার ইচ্ছা নাই ... ...
করোনার ক্রান্তিতে গত ২৬ মার্চ, স্বাধিনতা দিবস থেকে সারাদেশে গণছুটি ও গণপরিবহণ বন্ধ রেখে দফায় দফায় বাড়ানো হয় লকডাউন। সবশেষ ঈদের কেনাকাটার জন্য ১০ মে থেকে আংশিক লকডাউন শিথিল হলো। দোকান-পাট, মার্কেট ও শপিং মল সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা রাখার ঘোষণা এলো। সরকারের পক্ষ থেকে সবখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে দেখা যায়, করোনাকে মোটেই কেয়ার করছে না বাঙালি। দোকান-মার্কেট-শপিং মলে ঘেঁসাঘেষি আর ঠেসাঠেসি করেই চলছে কেনাকাটা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বেরিয়ে এলো প্রচুর ব্যক্তিগত যান, সিএনজি চালিত অটো-রিকশা, অবৈধ ইঞ্জিন রিকশা, রিকশা, ভ্রাম্যমান হকার ও সাধারণ মানুষ। আইন-শৃংখলা বাহিনীও সরিয়ে নিলো তাদের টহল ও নজরদারি। ... ...